Detail Biography:
অ্যানাটমি (দেহতত্ত্ব) বিদ্যার জনক ‘গ্যালেন’
গ্যালেনের জন্ম ১৩০ খৃষ্টাব্দে এশিয়া মাইনরের রাজধানী পোরগামাস শহরে। বাবা নিকন ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ভাস্কর। ছোটবেলা থেকেই গ্যালনের ছিল পর্যবেক্ষণ মন। পশুপাখী, কীটপতঙ্গ, গাছপালা এইসব ছিল তাঁর পর্যবেক্ষণের বিষয়বস্তু।
প্রতিনিয়ত চর্চা করে, গবেষণা চালিয়ে পরীক্ষামূলক চর্চা করে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানকে যিনি দৃড় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে যান, তিনি গ্যালেন। তিনিই অ্যানাটমি বিদ্যার জনক। চিকিৎসাবিদ্যার ওপর তিনি চারশত খানা পুঁথি রচনা করে যান। দুর্ভাগ্যবশত ১৯২ খৃষ্টাব্দে রোমে এক বিধ্বংসী অগ্নিকান্ড ঘটে, যাতে গ্যালেনের রচিত পুঁথিগুলির সিংহভাগ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। রক্ষা পায় মাত্র তিরিশখানি পুঁথি-যেগুলি প্রমাণ করে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে গ্যালেন কী অভাবনীয় উন্নতি করে গেছেন সেই সুদুর রোম শাসনকালে।
নিকন এক সময় খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তখন দৈবনির্দেশ পান, তুমি তোমার ছেলে গ্যালেনকে চিকিৎসাবিদ্যা পড়াও। সে মানবজাতির অশেষ কল্যাণ করবে।
নিকন সুস্থ হয়ে গ্যালেনকে পাঠালেন সে যুগের বিখ্যাত চিকিৎসক সাতিরাসের কাছে। এই সাতিরাস ছিলেন হিপোক্রিটিসের উত্তরসূরী। গ্যালেন তাঁর কাছে পাঁচ বছর ধরে চিকিৎসাবিদ্যার পাঠ নেন। বহুপ্রকার ভেষজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন।
আরও উচ্চশিক্ষার জন্য ১৫৩ খৃষ্টাব্দে গ্যালেন যান আলেকজেন্দ্রিয়ায়। তখনকার দিনে রোমে মল্লযুদ্ধের বিরাট আসর বসত বছরে একবার। অনেক যোদ্ধা গুরুতর আহত হতেন। গ্যালেনের আশ্চর্য চিকিৎসায় মারাত্মকভাবে আহত বহু মল্লবীর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন-যে কৃতিত্ব সে সময়ের বিখ্যাত চিকিৎসকদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
সে সময়ে ধর্মীয় ও সামাজিক বাধাতে শবব্যবচ্ছেদ নিষিদ্ধ ছিল। অথচ শারীরবৃত্তিম প্রত্যক্ষ জ্ঞান না থাকলে চিকিৎসাবিদ্যায় পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানার্জন সম্ভব নয়। গ্যালেন এ ব্যাপারে হাত দিলেন।
রাজধানী রোমে গিয়ে গ্যালেন স্বাধীনভাবে ডাক্তারি করা শুরু করে দিলেন। তাঁর ছোট চেম্বারের দেয়ালে কাঠের ফলকে লেখা ছিল-আমি গ্যালেন একজন চিকিৎসক। আমি কোনও মতবাদ মেনে চিকিৎসা করি না। নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাই আমার চিকিৎসার মূল কথা।
এই সময় তিনি প্রখ্যাত গ্রীক দার্শনিক ইউডিমিসকে মরণাপন্ন অবস্থা থেকে বাঁচিয়ে তোলেন আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে। বড়ো বড়ো নামী চিকিৎসকরা যখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন, তখন গ্যালেন এই অসাধ্য সাধন করেন। গ্যালেনের খ্যাতি গগনস্পর্শী হয়ে ওঠে। তাঁর শত্রু সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু রোমান সম্রাট অরিলিয়াস ছিলেন তাঁর পৃষ্ঠপোষক। যুদ্ধে আহত শত শত রোম সেনা গ্যালেনের চিকিৎসায় নতুন জীবন পাচ্ছেন। সম্রাট অরিলিয়াস বললেন, ‘প্রচিলিত ধ্যানধারণাকে অকারণ মান্যতা না দিয়ে গ্যালেন তাঁর নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতিতে আশ্চর্য সফল।
সরকারি সাহয্যে গঠিত হয়েছিল গ্যালেনের মস্ত গবেষণাগার। তিনি ছিলেন প্রচন্ড পরিশ্রমী। বিস্তর রোগী দেখবার পরও গবেষণা করতেন ও নিজের লব্ধ জ্ঞানকে লিখে রাখতেন।
কিন্তু বিকট অগ্নিকান্ডে তাঁর গবেষণার ও অধিকাংশ পুঁথি ভস্মীভূত হওয়ায় তিনি মানসিক দিক থেকে ভেঙ্গে পড়েন।
১৯৯ খৃষ্টাব্দে এই অনন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীর জীবনবসান হয়।
তথ্য সূত্র ঃ সেরা জীবনী সমগ্র।