Detail Biography:
ওমর খৈয়াম
‘বিজ্ঞানের সঙ্গে কবিতার তফাৎ বুঝি না’
ওমর খৈয়াম একজন কালজয়ী কবি।
আবার তিনি একজন বড় বিজ্ঞানীও।
ওমর ইবন ইব্রাহিম আল খয়ামি। ১০৪৮ খৃষ্টাব্দের ১৮ মে নিশাপুর, খোরাসান, পারস্য (বর্তমানে ইরান)। সে যুগের তুলনায় দীর্ঘজীবী- প্রায় ৮৩ বছর বেঁচেলিলেন।
সারা জীবন ধরে এক দিকে নান্দনিক চর্চা, অন্যদিকে গণিত ও জ্যেতিষ বিদ্যা নিয়ে বড্ড খুঁত-খুঁতানি ছিলো। তাঁর কবিকৃতি নিয়ে সর্বদেশে বিস্তর শোরগোল উঠেছে। তাঁর প্রেম, মায়াদয়া নিয়ে অনেকে অনেকরকম মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। তুলনায় বিজ্ঞানী ওমর খৈয়াম সম্পর্কে বেশিরভাগ আলোচনাই যেন খানিক দায়সারা ভাবে সম্পন্ন। অথচ তাঁর বিজ্ঞান প্রতিভার ঝাঁঝ এক কথায় ব্যতিক্রমী।
কবি হয়েও বিজ্ঞানচর্চায় উমর আল খয়ামি তাঁর আবেগ-তীব্রতাকে পরিহার করতে সমর্থ হয়েছিলেন। বীজগণিত ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। কেবল প্রিয় নয়, একদা গণিতের এই অপাঙক্তেয় শাখাটি তাঁর প্রায় দোসরে পরিণত হয়। সব সময় বীজগণিত নিয়ে ভাবেন ও জটিল জটগুলি খুলতে থাকেন। তাঁরই চেষ্টায় গাণিতিক বিষয় হিসেবে বীজগণিতের কৌলীন্য অনেক বেড়ে যায়।
কেবল বীজগণিত নয়, জ্যামিতি নিয়েও তিনি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। তাঁর বাস্থানের করিডোরে নাকি নানারকম জ্যামিতিক চিহৃ আঁকা থাকত। বীজগণিত এবং জ্যামিতির অনর্গল চর্চায় ওমর খৈয়াম যে উন্নত মান নির্ণয় করে যান, তাঁর মৃত্যুর পর সেই মান রক্ষা করবার মতো প্রতিভা আরব দেশে ছিল না।
ওমর খৈয়াম আরবি ভাষায় বীজগণিতের ওপর যে বইখানা লিখে যান, ফরাসি পন্ডিত ভোয়েপক তাঁর মাতৃভাষায় সেই বইয়ের অনুবাদ করেন। অনূদিত গ্রন্থের নাম L'algemed' Omar Alkhayyami. ১৮৫১ খৃষ্টাব্দে প্যারিসে ওই প্রন্থের প্রকাশ যেন এক বিস্ফোরণ। সোজাসাপটা কথায় পশ্চিমের বুদ্ধিজীবীমহল শ্রদ্ধা ও বিস্ময়মিশ্রিত অনুভূমি নিয়ে নবমূল্যায়ন করতে বসে গেল ওমর খৈয়ামের। একদিকে মধূময় কাব্যিক স্রোত, অন্যদিকে গণিতের নব নব রহস্য উম্মোচনের তন্নিষ্ঠ প্রয়াস- এই দুই বিপরীতমূখী সৃষ্টিকে মেলাতে পারছিলেন না তাঁরা। গ্রিক বিজ্ঞানীরাও বীজগণিত নিয়ে বিস্তর চর্চা এক সময় করে গেছেন। কিন্তু ওমর খৈয়ামের মতো নিখুঁত ও সৃষ্টিশীল তাঁরা ছিলেন না।
বীজগণিতে ওমর খৈয়াম ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান বের করেছেন। তিনি ত্রিঘাত সমীকরণকে ২৭টি শ্রেণীতে বিভক্ত করনে। এক-একটি শ্রেণীর আবার একাধিক চরিত্র। যেমন- ত্রিপদ [Trinomial], চতুষ্পদ [Quadrinomial]।
কেবল গণিত নয়, জ্যোতিষেও ওমর খৈয়ামের বিরাট অবদান। ১০৭৫ খৃষ্টাব্দে পারস্যের সুলতান মালিকশাহ্ জালালউদ্দিন পঞ্জিকা সংস্কারের দায়িত্ব অর্পণ করেন ওমর খেয়ামের ওপর। এই কাজ করতে গিয়ে খৈয়ামকে আনেকগুলি বছর ইসাহানের মানমন্দিরে কাটাতে হয়েছে। ওখানে বসেই তিনি রচনা করেন কালজয়ী আরবি পঞ্জিকা ‘আল-তারিখ আর জালালি।’ এই বই তিনি তাঁর নিয়োগকর্তা পারস্যের সুলতানকে উৎসর্গ করেন। প্রায় সর্বাংশে নিখুঁত, নির্ভুল গণনা। বস্তুত গ্রেগরীয় পঞ্জিকার থেকে এই পঞ্জিকা উন্নতার ও অধিক নির্ভরশীল।
১১৩১ খৃষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর জন্মস্থানে পরলোকগমন করেন এই মহাব্যক্তি ওমর খৈয়াম।
তাঁর কাব্যতত্বের কছিু চয়ন হতেঃ
'সৃষ্টির রহস্য জানো না তুমি, জানি না আমি
এ এমন এক জটিল বাক্য যা পড়তে পারো না তুমি, না আমি
পর্দার আড়ালে তোমায় ও আমার মাঝে চলছে এ আলাপ
পর্দা যেদিন উঠে যাবে সেদিন থাকবে না তুমি ও আমি।'
|
” |
অর্থাৎ সৃষ্টির রহস্যকে আমাদের কাছে রহস্যময় ও পর্দাবৃত মনে হয়। কিন্তু মনের চোখ বা আসল চোখ দিয়ে দেখা সম্ভব হলে এ পর্দা থাকে না।
আল্লাহকে জানতে হলে আগে নিজেকে জানা প্রয়োজন এমন ইসলামী বর্ণনা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি লিখেছেনঃ
“ |
বিশ্ব-দেখা জামশেদিয়া পেয়ালা খুঁজি জীবন-ভর
ফিরনু বৃথাই সাগর গিরি কান্তার বন আকাশ-ক্রোড়।
জানলাম শেষ জিজ্ঞাসিয়া দরবেশ এক মুর্শিদে
জামশেদের এই জাম-বাটি এই আমার দেহ আত্মা মোর।
|
” |
মহান আল্লাহর দয়া সম্পর্কে খৈয়াম প্রার্থনাসূচক রুবাইয়ে লিখেছেন,
“ |
দয়া যদি কৃপা তব সত্য যদি তুমি দয়াবান
কেন তবে তব স্বর্গে পাপী কভু নাহি পায় স্থান?
পাপীদেরই দয়া করা সেই তো দয়ার পরিচয়
পূণ্যফলে দয়া লাভ সে তো ঠিক দয়া তব নয়।
|
তথ্যসুত্রঃ সেরা জীবনী সমগ্র ও গুগল হতে।