Detail Biography:
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যা লিখেছেন, তার সবটাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে।
বাংলা তথা ভারতীয় সহিত্যে শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকদের মধ্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় স্থান খুবই উঁচুতে। তারাশঙ্কর যা লিখেছেন, তার সবটাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে।
১৮৯৮ খৃষ্টাব্দের ২৩ জুলাই বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামের এক ক্ষয়িষ্নু জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। বাবা হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মা প্রভাবতী দেবী। ১৯১৬ খৃষ্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৭ খৃষ্টাব্দে লাভপুর গ্রামেরই কন্যা উমাশশীর সাথে তাঁর বিয়ে হয়।
উচ্চশিক্ষার্থে কলকাতায় আসেন তারাশঙ্কর। কিন্তু গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনের শামিল হয়ে পড়ায় তিনি কলেজের পাঠ মধ্যপথে ত্যাগ করেন। কিছুদিন কলকাতায় কয়লার দোকান চালান। তারপর একটি চাকরি নিয়ে চলে যান কানপুরে।
১৯২৬ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর একটি কবিতার বই। সে বই সাড়া তুলতে ব্যর্থ হয়। ‘মারাঠা-তর্পণ’ নামক একটি নাটকও লেখেন। কিন্তু তাঁর গল্প কোনও পত্রিকাই ছাড়াতে রাজি হলো না। ডাকযোগে লেখা পাঠাতেন। কিন্তু লেখা ফেরৎ আসত। অবশেষে ‘কল্লোল’ পত্রিকায় তাঁর বিখ্যাত গল্প ‘রসকলি’ প্রকাশিত হলে সাহিত্য সমালোচকদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
১৯৩০ খৃষ্টাব্দে তারাশঙ্কও আইন অমান্য করে আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারারুদ্ধ হন। জেল থেকে বেরিয়ে এসে দেশপ্রেমিক তারাশঙ্কর সাহিত্যকেই তাঁর জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেন। ক্রমে তাঁর গল্প, উপন্যাস ছাপা হতে থাকে বিখ্যাত সমস্ত বাংলা পত্র-পত্রিকায়।
এই সমস্ত পত্রিকার মধ্যে ভারতবর্ষ, প্রবাসী, দেশ, শনিবারের চিঠি, যুগান্তর, অমৃত, কালিকলম, কল্লোল, বঙ্গশ্রী, উপাসনা, পরিচয়, বসুমতী ইত্যাদির নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
ক্ষয়িষ্নু জমিদারদের নিয়ে লেখা তাঁর উপন্যাস এক নতুন মাত্রা এনে দেয় বাংলা সাহিত্যে। আঞ্চলিক মানুষদের চরিত্র ও জীবনযাত্রা দুর্লভ দক্ষতার সঙ্গে তিনি চরিত্র করেছেন। তাঁর বেশির ভাগ উপন্যাসেই রয়েছে মাটির গন্ধ। তাঁর রচিত উপন্যাসগুলির মধ্যে ‘ধাত্রী দেবতা’ ‘গণদেবতা’ ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ ‘মš^ন্তর’ ‘আরোগ্য নিকেতন’ ‘কবি’ ‘ডাক হরকরা’ ইত্যাদি বাংলা সাহিত্যের অমর সম্পদ।
তারাশঙ্করের গল্প-উপন্যাসে একদিকে যেমন রয়েছে বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ, অন্যদিকে আছে সমাজের নিম্নতলবাসীরাও যেমন বেদে, সাপুড়ে, চৌকিদার, ডাকহরকরা প্রমুখ। লেখকের নিখাদ দেশপ্রেমেরও পরিচয় মেলে কিছু রচনায়।
তাঁর অনন্য সাহিত্যকীর্তির জন্য তিনি নানান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ‘জ্ঞানপীঠ’ ও ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার এদের অন্যতম।
১৯৫২ খৃষ্টাব্দে তাঁকে বিশেষ সম্মান জানিয়ে বিধান পরিষদের সদস্য করা হয়। তিনি কিছুকালের জন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব বহন করেন।
১৯৭১ খৃষ্টাব্দের ১৪ সেপ্টম্বর ইহধাম ত্যাগ পরলোকগমন করেন।
তথ্যসুত্রঃ সেরা জীবনী সমগ্র।